ঢাকা | রবিবার | ৩০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগামী নির্বাচনগুলোকে সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য করবে: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে জনগণের স্বাধীকারের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। মানুষের জীবন বাজি রেখে যে ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে, যা বিভিন্ন নির্বাচনে হরণ করা হয়েছে, তার ফলে অপশাসন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনগুলো আরও সুসংহত, বিশ্বাসযোগ্য ও গণমুখী হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কমল মেডিকেল অ্যাডভাইজরি কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেছেন।

আমীর খসরু বলেন, এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু নির্বাচন হওয়ার মুখে রয়েছি। তারা আশা ব্যক্ত করেন, এ ধরনের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, যদিও এই নির্বাচনের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যুক্ত থাকার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও বলেন, সরকারের অনুপস্থিতির কারণে দেশের অগ্রগতি থমকে দাঁড়িয়েছে, অথচ এখনো একটি অস্বীকৃত সরকার দেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে — যদিও তিনি অতীতের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে এর তুলনা করতে চাননি। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারই দেশের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব করে, যা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য তিনি পুনরায় বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অপেক্ষা হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য, যা কেয়ারটেকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আনতে পারে।

অপরদিকে, তিনি সামাজিক ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়েও কথা বলেন এবং বলেন, উন্নত দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবেও সামাজিক কাজে অংশ নেয়—এখনো এটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নির্মিত হয়নি। তিনি যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন।

স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ফার্মেসি না থাকা দেখে তিনি বিস্মিত হন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা শুরু করতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রত্যেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পায়। তিনি অবাক হন যে, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদকের সমস্যা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পরিবারকে স্বাস্থ্য খাতে মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করতে হয়, তবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা থাকলে এটি অনেকটাই সাশ্রয় হয়।

বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল সবাই একসঙ্গে পাশে দাঁড়াবে, যা আজকের কমল মেডিকেল অ্যাডভাইজরি কমিটির উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা মানোন্নয়ন ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকা অবস্থায় যারা অসুস্থ হলে, তার উপরে কী প্রভাব পড়ে তা বুঝতে পারেন না, পরে বোঝেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কোনো ফার্মেসি নেই, কেবল এলিট শ্রেণির জন্য একটি ফার্মেসি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই পরিস্থিতির মধ্যে মোবাইল মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

কমল মেডিকেল অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর যখন তিনি হলে উঠেছিলেন, তখন দেখেছিলেন আশপাশে কোনো ফার্মেসি ছিল না। সেই চিন্তা থেকে তিনি ভাবলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব কিনা। এ ভাবনা থেকেই কমল মেডিএইড-এর যাত্রা শুরু হয়। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা এখনও দুর্বল। তিনি আহ্বান জানান, ডাকসু যেন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা না হয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করে।