ঢাকা | সোমবার | ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা কাটিয়ার আবারো মুসলিমদের অযোধ্যা ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান

বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনয় কাটিয়ার সম্প্রতি ফের একবার মুসলিম সম্প্রদায়কে অযোধ্যা ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “মুসলিমদের উচিত সরযূ নদী পার হয়ে অযোধ্যা ছেড়ে চলে যাওয়া। তারা গন্দা বা বস্তিতে থাকতে পারে। এখানে শুধু রাম মন্দির থাকবে,”—এমন বক্তৃতায় অযোধ্যার ধর্মীয় সংহতির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর থেকে অযোধ্যায় শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকলেও কাটিয়ারের এই ভাষণ আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ওই রায়ে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ধন্নীপুরে একটি মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়। যদিও এই সিদ্ধান্তে ভারতের মুসলিম সমাজ কিছুটা হতাশ হলেও তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সমর্থ হয়। শান্তির এই পরিস্থিতিতে কাটিয়ারের মন্তব্য অনাকাঙ্খিত ভাঙন সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

একজন মুসলিম বাসিন্দা বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করেছিলাম। এখন আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বলা হচ্ছে, এটা কি ন্যায্য?”। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ধন্নীপুরে মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ করলেও প্রকল্পটি এখন নানা বিলম্বের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাটিয়ারের ভাষণ এই বিভাজন আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। একজন সমাজকর্মী মন্তব্য করেছেন, “বিজেপি অযোধ্যার ধর্মীয় রাজনীতিকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। রাম মন্দিরের পর এখন তারা মসজিদ ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করছে।”

বিরোধী দলগুলো এই মন্তব্যকে অসাংবিধানিক বলে নিন্দা জানিয়ে বলছে, “অযোধ্যা ভারতের সমস্ত নাগরিকের বিষয়। কেউ মুসলিমদের জোর করে বের করে দিতে পারে না।” কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা এই বিষয়ের বিস্তারিত তদন্ত ও জবাবদিহিতা দাবি করেছেন, এই ধরনের বক্তব্য সমাজে বিভেদ বাড়াতে পারে ও দেশের সংহতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

অযোধ্যার বাসিন্দারা, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছেন, তারা এই ধরনের উত্তেজनाक পরিস্থিতি থেকে সতর্ক। হনুমান গড়হি মন্দিরের কাছে এক দোকানদার বলেন, “আমরা শান্তিই চাই, বিভেদ নয়।” এখন যখন রাম মন্দির সম্পূর্ণ করার পথে এবং ধন্নীপুরের মসজিদ প্রকল্পটি স্থবির, তখন কাটিয়ারের এই মন্তব্য আরও এক দফা আঘাতহানা করতে পারে শহরটির শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির উপর। এই পরিস্থিতি হয়ত নতুন করে শহরটির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সুসম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।